হারুন অর রশীদ
স্টাফ রিপোর্টার।
কালাই উপজেলায় উদয়পুর ইউনিয়নে হিমাগার
কর্তৃপক্ষের নানা অবহেলায় হিমাগারে সংরক্ষণে রাখা আলু পচন ধরেছে বলে অভিযোগ উঠেছে গঙ্গাদাশপুর ও মোসলেমগঞ্জ মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগারের বিরুদ্ধে । এ অবস্থায় ব্যাপক লোকশানের মুখে পরেছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হিমাগার কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। কিন্তু, ক্ষতিপূরণত দূরের কথা আলু পচনের পরেও কর্তৃপক্ষ তাদের হিমাগার ভাড়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত আলু বের করতে দিচ্ছেনা।
সরজমিনে গিয়ে আলু পচনের এমন ঘটনা দেখাগেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত গঙ্গাদাশপুর মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগারে ।
জানা গেছে, উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের একই মালিকের দুইটি হিমাগার মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগার এবং মোসলেমগঞ্জ মান্নান বীজ হিমাগারে ৬৫ কেজি ওজনের রোমানা জাতের আলু প্রায় ৮০ হাজার বস্তা পচা ও দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এর পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে । এ অবস্থায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ কৃষকদের আলু পচনের সংবাদ একবারে না দিয়ে পর্যায়ক্রমে সংবাদ দিচ্ছেন। এসব পচন ও দুর্গন্ধময় আলু বের করার আগে বস্তাপ্রতি ৩৪০ টাকা হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করে নিয়ে নিচ্ছেন। আলু হিমাগার থেকে বের করার পর বস্তা খুলে দেখা যায় ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ওজনের মধ্যে প্রায় ৩০ কেজি আলু পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। বাজারে যেখানে ৬০ কেজি আলুর দাম ২৫শ টাকা সেখানে হিমাগারে শেডে পাইকারি বিক্রি করছে ১এক হাজার থেকে ১২শ টাকা এতে করে কৃষক ও ব্যবসায়ীর প্রতি বস্তায় লোকশান গুনতে হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৫শ টাকা। এ ছাড়াও এসব পচন ধরা আলু কিনতেও চাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে করে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ওই এলাকার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও অনেক কৃষক অভিযোগ করেন মান্নান এন্ড সন্স হিমাগারের ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জিম্মি করে ব্যবসা করে। যদি কোন ব্যবসায়ী কোন কৃষকের আলুর দর করে তাহলে সেখানে অন্য ব্যবসায়ীরা আর দাম করেন না। অতচ কৃষকরা অন্য হিমাগারে বস্তা প্রতি ১৫০-২০০শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারে। এ বিষয়ে তারা মৌখিক অভিযোগ দিলে কোন ব্যবস্থা কোন ব্যবস্থা নেন নি কর্তৃপক্ষ।
মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগারে চুক্তি ভিত্তিক আলু বাছাইকারি নারী শ্রমিক দেলোয়ারা বেগম,রওশন আরা,ফিরোজার সাথে কথা হলে তারা জানান, প্রতিটা বস্তায় ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ওজনের প্রায় আলু থাকে সেখানে প্রায় ৩০ কেজি আলু পচন ধরার কারনে ফেলে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত পচনের আর দুর্গন্ধের ফলে আমরা সব আলু বাছাই করতে পারছিনা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যবসায়ীরা জানান, হিমাগার কর্তৃপক্ষ ধারণক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত আলু রাখা এবং সময়মত গ্যাস না দেওয়ার কারনে তাদের ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় তারা সুষ্ঠ তদন্ত চান।
উদয়পুর ইউনিয়নের সানাইপুকুড় গ্রামের কৃষক খায়রুল ইসলাম ও জাকারিয়া বলেন, মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগারে আমাদের রাখা ৭১ বস্তা আলু নষ্ট হয়েছে। নষ্ট আলু নিতে গেলে তারা আমার আলুর ক্ষতিপূরণ না দিয়ে উল্টো বস্তা প্রতি ৩৪০ টাকা ভারা নিয়ে আলু ছেড়েছে। অনেকের কাছে বল্লেও এর কোন প্রতিকার পাইনি। অন্য সব হিমাগারের আলু ভাল থাকলেও এ হিমাগার মালিক পরিমাণর চেয়ে বেশি আলু রাখায় বহু আলু নষ্ট হয়েছে। আমরা এর ক্ষতি পূরুন চাই।
এল্লাগাড়ি গ্রামের কৃষক ইয়াছিন বলেন, ১ বছর আগেও মান্নান হিমাগারে অনেক আলু পঁচে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবারও আমার আলুসহ অনেক কৃষকের আলু হিমাগারের ভিতর পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এভাবে আমরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এসব নষ্ট আলু নিতেও চাচ্ছেনা। আমরা কৃষকরা অভিযোগ করলেও এর কোন প্রতিকার পাইনা। আমাদের দিকে দেখার তাহলে কেউ নেই কি?
গঙ্গাদাসপুর গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, আমি মান্নান এন্ড সন্স হিমাগারে ২০০ বস্তা আলু রেখেছি এর মধ্যে তারা আমাকে ১৩ বস্তা রুমানা বীজ আলুর রিপোর্ট দিয়েছে। এসে দেখি এই আলুগুলি নেওয়ার উপযোগী রাখেনি। প্রায় বস্তার সব আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমি বীজ পাব কোথায় জমি রোপণ করবো কিভাবে? এদের বিরুদ্ধে আইনানানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।
নুনুজ গ্রামের কৃষক আলী বলেন, আমার ৪৫ বস্তা আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলাই আর সেই ফসল যদি হিমাগার কৃতপক্ষ তাদের লাভের আশায় ও অবহেলায় নষ্ট করে ফেলে তখন কষ্টের সীমা থাকেনা। জরুরি একটা ব্যবস্থা করা দরকার।
জমিনপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, আলু পচার সংবাদ তারা সকলকে একসাথে না দিয়ে স্টোরের মালিকের অসুবিধা হবে মনে করে পর্যায়ক্রমে কৃষকদের সংবাদ দিচ্ছে। এভাবে যদি আলু পচে যায় তাহলে কৃষকের আলু উৎপাদনে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও ব্যয় বহুল টাকা খরচার ক্ষতিপূরণের টাকা কে দিবে?
ব্যবসায়ী বাবু বলেন, আমার নিজ জমিতে উৎপাদিত কোয়ালিটি সম্পন্ন আলু মান্নান এন্ড সন্স হিমাগারে রাখি। তারপরও আমার এত ভালো ও মানসম্মত আলু গুলো তারা তাদের অবহেলার কারণে নষ্ট করে ফেলেছে। শুধু তাই নয় এবার এ হিমাগারে অনেক আলু পচে নষ্ট হয়ে গেছে যা হিসাব মিলানো মুশকিল। এতে বহু কৃষকরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা এর ক্ষতি পূরুনের দাবি জানাচ্ছি।
ব্যবসায়ী মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মান্নান এন্ড সন্স হিমাগারে আলু নষ্টের কারনে আমাকে আগাম ২৫০ বস্তা আলু বের করে বিক্রি করে খেতে হলো। আমার আলু যা ক্ষতি হবে কোম্পানিকে দিতে হবে এটা আমার দাবি।
গঙ্গাদাশপুর মান্নান এন্ড সন্স বীজ হিমাগারের ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, সব হিমাগারে আলু কমবেশি পচে। আপনারা আমার এখানে পচা আলু দেখান। আমার এখানে কোন আলু পচেনি। এই পচে যাওয়ার নিউজত গত বছর আগেও একবার করেছিলেন কি হয়েছিল।
কালাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কমকর্তা কৃষিবিদ অরুণ চন্দ্র রায় ‘বিকাল বার্তা পত্রিকা কে বলেন, আমরা কৃষকদের কাছথেকে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কৃতপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীর কোন অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্