স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ‘তেলীগাওঁ নরসিংহ জিউর আখড়া বাড়ীকে কেন্দ্র করে পাল্টা পাল্টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই নিয়ে তেলীগাওঁ, নয়াবন্দ, শ্রীপুর, বানিয়াগাওঁ এবং বালিয়াঘাট সহ ১৪ গাঁয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভক্তি,ক্ষোভ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত একমাস পূর্বে উপজেলার ‘তেলীগাওঁ নরসিংহ জিউর আখড়া বাড়ীর’ প্রাঙ্গনে নয়াবন্দ গ্রামের শিতেশ পালকে সভাপতি এবং তেলিগাওঁ গ্রামের রঞ্জু সেনকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গত শনিবার একই স্থানে এই কমিটিকে প্রত্যখান করে তেলিগাঁও গ্রামের জগদীশ চন্দ্র দাসকে সভাপতি এবং বালিয়াঘাট গ্রামের সজল চন্দ্র তালুকদার কে সাধারণ সম্পাদক করে অপর আরেকটি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সনাতন ধর্মালম্বী একই প্রতিষ্টানে দুইটি কমিটি গঠন হওয়ায় ১৪ গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিভক্তি এবং উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় দু’পক্ষের লোকজনের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে বলেও স্থানীয়রা ধারণা করছেন। জানা যায়, তেলীগাঁও নারসিংহ জিউর আখড়া বাড়ীর কমিটি গঠন নিয়ে গত দশ বছর ধরে গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী দুইটি পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দ্বিধা বিরোধ চলে আসছে। এই নিয়ে দু’পক্ষের লোকজন বিভক্ত হয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি আচার- আচারন পৃথক ভাবে পালনও করছেন। একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তেলীগাঁও গ্রামের প্রভাবশালী কয়লা ব্যবসায়ী রনধীর পাল বেনু ও মতিশ পাল। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রভাবশালী কয়লা ব্যবসায়ী নয়াবন্দ গ্রামের শিতেশ পাল ও তেলীগাঁও গ্রামের রঞ্জু সেন। তারা সম্পর্কে মামা ভাগনা। তেলীগাঁও গ্রামের কয়েকজন জানান, এই আখড়াবাড়ীকে ঘিরে গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মারাত্মক বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একপক্ষের লোকজন অপরপক্ষের সামাজিক অনুষ্ঠান সহ ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে দেখা যায় না। তারা পৃথক ভাবে তাদের মতো করে সব কিছু পালন করে আসছেন। এমনকি মৃত ব্যাক্তির সৎকার সহ ধর্মীয় রীতিনীতি ভিন্ন ভাবে পালন করেন। একপক্ষ বলেন, আমাদের নিয়মনীতি ঠিক আছে, আরেকপক্ষ বলেন তাদের নিয়মনীতি ঠিক আছে। এভাবেই চলছে দিনের পর দিন তাদের চলাফেরা। বিষয়টি স্থানীয় ভাবে কয়েকবার বসেও সমাধান হয়নি। এখানে কেউ কাউকে চাড় দিতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত সাবেক সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের নজরে আসে বিষয়টি। পরে সাবেক এমপি রতন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি করের মধ্যস্হায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় দু’পক্ষের সিনিয়রদের নিয়ে বসে তাৎক্ষণিক সিতেশ পালকে সভাপতি করা হয় এবং সাধারণ সম্পাদকের পদটি পরবর্তীতে দু’পক্ষের লোকজন এক সঙ্গে আখড়াবাড়ীতে বসে নির্ধারন করার জন্য বলা হয়। গত কিছুদিন আগে হঠাৎ শিতেশ পাল অপর পক্ষের কাউকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে আখড়াবাড়ীতে বসে রঞ্জু সেনকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করলে বিষয়টি নিয়ে আবার অপর পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠে এবং এ কমিটিকে প্রত্যাখান করে পুনরায় আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়। এ বিষয়ে শিতেশ পাল বলেন, এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৪ গায়ের মানুষ নিয়ে গত এক মাস পূর্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপর পক্ষের তাদের কেউ বলা হয়েছে, কিন্তু তারা মিটিংয়ে আসেন নি। কিছুদিন পর বাৎসরিক কিত্তন অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে শুনেছি গতকাল আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এ কাজটি ঠিক করেন নি। বিষয়টি অস্বীকার করে রণধীর পাল বেনু বলেন, গ্রামের কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে শিতেশ পাল একটি মনগড়া কমিটি গঠন করেছে। ধর্মীয় প্রতিষ্টান সবার। সবাইকে নিয়ে মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা উচিত ছিল। মতিশ পাল বলেন, আখড়া বাড়ী নিয়ে বার বার চক্রান্ত করা হচ্ছে। গত বছর তারাই আখড়াবাড়ী তালাবদ্ধ করে রাখে, বিষয়টি সবারই জানা। এইদিকেও গ্রামবাসীকে অবগত না করে একটি পকেট কমিটি করে শিতেশ পাল। তার এই কমিটিকে প্রত্যাখান করে ১৪ গাওয়ের মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁদেরকে বলা হয়েছে, কিন্তু তারা কেউ আসেনি।