জকিগঞ্জ (সিলেট) সংবাদদাতা: সিলেটের জকিগঞ্জে শেলিনা আক্তার শেলি (১৭) নামের এক তরুণীর অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে গর্ভপাতের ঔষধ সেবনে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। তরুণীর দাফনের পর থেকে এলাকায় দেখা দিয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।শেলিনা জকিগঞ্জ উপজেলার বারঠাকুরী ইউনিয়নের দরিয়াপুর গ্রামের মৃত. জহির উদ্দিনের মেয়ে। গত শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সিলেট শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে দরিয়াপুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মরহুমার নামাজের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
স্থানীয়রা বলেন, মৃত্যুর আগে থেকে শেলিনাকে নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও কেউ মুখ খুলেনি। সিলেট থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসে গোসল করানোর পর থেকে প্রকাশ্যে ও গোপনে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অবিবাহিত ওই তরুণী অন্ততপক্ষে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। গোপনে জোরপূর্বক গর্ভপাতের ঔষধ সেবনের দায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন সিলেটের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।দরিয়াপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা বেগম বিবি ও নাজমা বেগম বলেন, শেলিনার মরদেহ গোসল করানোর সময় অন্তঃসত্তা সন্দেহ হয়। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হয় চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার কারনে ইনজেকশনে লাশ ফুলে গেছে।
স্থানীয় আখলিছুর রহমান বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি সে অন্তঃসত্ত্বা ছিলো, তাতে কোন সন্দেহ নাই। মেয়েটির অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে জোরপূর্বক গর্ভপাতের ঔষধ সেবনের দায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সিলেটের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এলাকায় বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ বিশিষ্টজনের তার জানাজায় উপস্থিত হননি। এ ব্যাপারে আমি ৯৯৯ এর মধ্যে জকিগঞ্জ থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। জঘন্যতম অপরাধে দুটি প্রাণহানির সংবাদ পাওয়ার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। স্থানীয় একটি মহল অজ্ঞাতক কারণে দুষ্কৃতিদের বাঁচাতে বিষয়টি দামাচাপা চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল আহমদ বলেন, শেলিনার মৃত্যুর বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই। স্থানীয় জকিগঞ্জ থানা পুলিশ আমাকে ফোন দেওয়ার পর জানতে পারি তার মৃত্যু হয়েছে।সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পিয়ারা বেগম বলেন, শেলিনা আমার পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা কি কারনে তার মৃত্যু হয়েছে জানি না। তবে পরিবারের লোকজন বলেছেন ডায়রিয়া জনিত অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য সিলেট নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। যাঁরা লাশ গোসল দিয়েছিলেন তারই ভালো বলতে পারবে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকার একটি দুষ্কৃতিকারী মহল নানান ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আত্মসম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে পারছি না। এ সময় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শেলিনার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করার দাবি জানান।
সেলিনার পরিবারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
জকিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস.এম মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, ৯৯৯ -এর মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে বলেন ডায়রিয়া জনিত অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। আমার যোগদানের পূর্বে কেউ যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে আমার জানা নেই।