নবিজুল ইসলাম নবীন বিশেষ প্রতিনিধি,
উত্তরের জেলা নীলফামারীতে পাঁচদিন ধরে দেখা মেলেনি সূর্যের। রাত থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। বিমান চলাচলেও বিঘ্ন ঘটছে।
শুক্রবার (১২ জানয়ারি) নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরে সকাল ৯টায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এরকম তাপমাত্রা আরও কয়েকদিন থাকবে। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারনে প্রায় প্রতিদিনই সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে।
সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাতভর পড়া কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের সন্ধানে। নিম্ন আয়ের মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুক্ষেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। আবার গৃহপালিত প্রাণীর শীতজনিত রোগের আশঙ্কা বাড়ছে।
পলাশবাড়ী এলাকার ইজিবাইকচালক মহির উদ্দীন বলেন, ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে, এক দিকে আয় কম অন্যদিকে বাজারের সব জিনিসের দাম বেশি।
রমজান আলী নামে আরেক এক বাইকচালক বলেন, চার দিন থাকি ঠান্ডা খুব বেশি হইছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাত আস্তা দেখা যায়ছে না। লাইট জ্বালে জানটা হাতোত নিয়া পাকা রাস্তা দিয়া গাড়ি চালাইছি। বিকাল ৪টার পর ঘন কুয়াশা শুরু হয়। সন্ধ্যা হইলে লাইট জ্বালেও কিছুই দেখা যায় না।
জেলার চওড়া বড়গাছা এলাকার কৃষক মোতালেব বলেন, এত ঠান্ডারে ভাই, ঠান্ডায় হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। ভুট্টা আবাদ করছি ওষুধ না দিলে পোকা শেষ করে দেয়ছে ভূট্টার গাছ। কিছু করার নাই যত ঠান্ডাই হোক কাম করির লাগবে।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপও বাড়ছে।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান বলেন, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এ সময় চলাফেরায় সবাইকে সাবধান হতে হবে, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, শীত মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে। শীতবস্ত্র হিসেবে জেলার ছয় উপজেলা ও চার পৌরসভায় ৪০ হাজার পিস কম্বল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ১০ হাজার মজুদ আছে। প্রয়োজনে আরও চাহিদা দেওয়া হবে।