নরসিংদী প্রতিনিধি:
নরসিংদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক এক নেত্রীর মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ করায় তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল: রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নরসিংদী শহরের বিলাসদী এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী মিনহাজুর রহমান (১৭) নরসিংদী সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী। সে শহরের বাসাইল এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শাহ আলম জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইভা আলমের স্বামী। তিনি সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিব। শাহ আলম, তাঁর ভাই শাহেদ হোসেনসহ অন্তত ২০ জন হামলা করেন বলে অভিযোগ। তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আজ শুক্রবার ঘটনা জানাজানির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীর সহপাঠী ও স্বজনেরা জানান, জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা প্রস্তুতের সময় আন্দোলনে অংশ না নিলেও ইভা আলম ও শাহ আলম দম্পতির মেয়ের নাম জুলাইযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায়। পরে মিনহাজুর রহমানসহ নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জুলাইযোদ্ধার তালিকা থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের নাম বাদ দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। সম্প্রতি জুলাইযোদ্ধাদের অনুদানের চেক বিতরণ করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেখানে আহত হিসেবে অনুদান পাননি ইভা–শাহ আলম দম্পতির মেয়ে। এরপর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়ে আসছিল ইভা ও শাহ আলম দম্পতি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িতে ফেরার সময় মিনহাজুর রহমানের ওপর শাহ আলম ও তাঁর ভাই শাহেদ হোসেন দলবল নিয়ে হামলা করেন। এ সময় দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, ওই কলেজ ছাত্রের ফুসফুসে আঘাতের চিহ্ন ছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
হামলার সময় মিনহাজুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহপাঠী সাজিদ হোসেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদনের পর থেকে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। গতকাল রাতে অন্তত ২০ জনের মতো লোক মিনহাজুরকে দেশি অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার।
এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত শাহ আলম ও ইভা আলমের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে চারজনকে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।