বিশেষ প্রতিবেদক:
সিলেটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনার ৫ মামলার অন্যতম আসামি ডেভিল জাকারিয়া আহমদকে গ্রেফতারের মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে জামিনে মুক্ত হন। এ ঘটনায় সিলেটজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এছাড়াও কোর্ট প্রাঙ্গনে প্রকাশ্যে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডেভিল জাকারিয়ার পক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের সিলেট জেলার যুগ্ম আহবায়ক, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মো. আলী আকবর রাজন সাফাই গেয়ে সিলেট বিএনপিকে বিতর্কৃত করায় দল থেকে বহিস্কার হচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র। এছাড়াও একজন ডেভিলের জামিনের বিরোধীতা না করার কারনে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং সিলেটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবিদের ক’জন সিনিয়র এ্যাডভোকেটকে শোকজ করা হবে বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।
এর আগে সোমবার (২৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জাকারিয়া আহমদকে তার মদিনা মার্কেটস্থ বাসা থেকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এসএমপির কোতোয়ালী থানায় তাকে রাতেই হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকালে পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর আসামির আইনজীবি জামিনের আবেদন করলে বিজ্ঞ বিচারক জাকারিয়া আহমদের জামিন মঞ্জুর করেন। এবং উপস্থিথ সিলেটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ক’জন সিনিয়র এ্যাডভোকেট নিরবতা পালন করেন!
মঙ্গলবার সকালে জাকারিয়াকে থানা থেকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সেখানে জড়ো হন ডেভিল জাকারিয়ার অনুসারীরা। সেই সাথে সেখানে আসেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। তারা আদালত প্রাঙ্গনে এসে জাকারিয়ার মুক্তির দাবী করেন। এসময় তারা সেই পুরনো হুমকি শুরু করেন শ্রমিকরা। সিলেট নগর জুড়ে তারা গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে ডেভিল জাকারিয়ার মুক্তির জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এসময় জাকারিয়ার মুক্তির জন্য প্রকাশ্যে অবদান রাখেন আলী আকবর রাজন। এসময় আদালত প্রাঙ্গনে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সূত্র জানায়, পরিস্থিতি ঘোলাটে করে জাকারিয়াকে জামিন দিতে বাধ্য করানো হয়। আর এসময় আদালতে জাকারিয়ার বিপক্ষে কোন আইনজীবিকে দেখা যায়নি।
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, জাকারিয়া আহমদের শুনানীর সময় আদালতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিএনপি ঘরানার ৩ জন আইনজীবি। এছাড়াও এপিপি গোলাম রসুল সুমেল এবং রাষ্ট্র পক্ষের সিএসআই আব্দুল হামিদ। উপস্থিত কেউই জাকারিয়া আহমদের জামিনের বিরোধীতা করেন নি! যে কারনে যুক্তি দেখিয়ে সহজেই জাকারিয়া জামিন লাভ করে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জাকারিয়ার জামিনের আবেদন করেন সিলেট আওয়ামী লীগ ঘরানার সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির একজন সিনিয়র এডভোকেট।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ডেভিলদের মোকাবিলায় দেশের যেকোনো আদালতে দলীয় আইনজীবীরা আদালতে হাজির হয়ে তাদের বিপক্ষে বিরোধিতা করে জামিন নামোঞ্জুরে ভূমিকা রাখবেন। অথচ সিলেটে অতীতের মতো আজও এর ব্যতিক্রম হল!
জাকারিয়া আহমদকে গ্রেফতারের বিষয়টি মিথ্যা মামলা আখ্যায়িত করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল সিলেট জেলার যুগ্ম আহবায়ক, সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক, পরিবহন নেতা মো. আলী আকবর রাজন বলেন, আমাদের অত্তন্ত প্রিয়ভাজন জাকারিয়া ভাইকে গতকালকে রাতে সম্পূর্নভাবে এক মিথ্যা মামলায় আটক করে নিয়ে আসে প্রশাসন। রাজনীতি যারতার, আমরা সবাই বলি শ্রমিকসব এককাতার। এই শ্রমিকের স্বার্থে উনি হয়তবা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর পাশে গিয়েছিলেন শ্রমিকের স্বার্থে।
ওনার ব্যক্তিগত কোনো পারিবারিক সমস্যা বা জায়গা সম্পত্তির সমস্যার জন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতার পাশে যান নাই। উনি কোনো শ্রমিকের হয়তবা কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা বা দাবি পুরনের জন্য কোনো প্রস্তাবের জন্য কোনো আওয়ামী লীগ নেতাদের পাশে যেতে পারেন।
আমরা এটা জানি না, আমরা একটাই জানি, যে আমরা পরিবহন সেক্টরের যারা আছি আমরা মেহনতি শ্রমিক, এই শ্রমিকের দাবি আদায়ে আমাদের নেতা আজকে সম্পূর্নভাবে আদালত আজকে জামিন দিয়েছে।
ডেভিল জাকারিয়ার মুক্তির পর নগরে প্রকাশ্যে তার সমর্থিত নেতা কর্মীরা এ্যাকশন, এ্যাকশন, ডাইরেক্ট এ্যাকশন। কই গেলো তর বাপেরা? ওই দালালরা দেইখ্যা যা, জাকারিয়ার কাফেলা! এমন স্লোগান দিয়ে মিছিল করে।
এরপর সংগঠন কার্যালয়ে গিয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন জাকারিয়া আহমদ। বক্তব্যে তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন পদে নেই এবং পরিবহন শ্রমিকদের সার্থে বিগত সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানান। এছাড়া তার বক্তব্যে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারকে বার বার বিগত সরকার বলে সম্বোধন করেন। একটিবারের জন্যও তিনি ফ্যাসিস্ট বা পতিত সরকার বলেন নি। এ নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সুত্রে জানা গেছে, জাকারিয়া আহমদের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগে এসএমপির বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সকল মামলায় তাকে শ্রমিক লীগ নেতা হিসেবে আসামী করা হয়েছে। এছাড়া জেলা সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি থাকার সুবাদে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সিলেটে দাপট দেখিয়ে শ্রমিকদের ব্যবহার করে কোনো কারণ ছাড়াই সড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তির সৃষ্টি করতেন। ফ্যাসিস্ট আমলে বিরোধী দলগুলো হরতাল ডাকলে তার নেতৃত্বে রাস্তায় গাড়ী বের করা হতো। এছাড়া বিএনপি-জামায়াত কোন কর্মসূচী ডাকলে জনসমাগম ঠেকাতে গাড়ী বন্ধ রাখতে তিনি অগ্রনী ভুমিকা পালন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।