এ এ রানা::
শেষ মুহুর্তে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনাই দেখছেন নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় বিভিন্ন সূত্র। এরমধ্যে পরস্পরের প্রতি কাঁদা ছুঁড়াছুড়িও চলছে। বিষয়, টাকার ছড়াছড়ি।
সংসদ নির্বাচনের মতো ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তাই তারা বা তাদের সমমনা দলগুলোর কোনো প্রার্থী নেই এ উপজেলায়। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ছড়াছড়ি। চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থীর সবাই এই দলের।
তারা হলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম (দোয়াত- কলম), সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সমাজসেবক শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ ( ঘোড়া) এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ব্রাজিল যুবলীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল (আনারস)।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর দিকে প্রচারণা ও জনসমর্থন বিবেচনায় বর্তমান চেয়ারম্যান এলিম চৌধুরী অন্য দুই প্রার্থীর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে জাবেদ এবং উজ্জ্বলের প্রতি জনগনের সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। তবে শেষ মুহুর্তে অভিজ্ঞতার কাছে তাদের হার মানতে হতে পারে বলেও শক্ত ধারণা সচেতন মহলের।
এলিম চৌধুরী গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইকবাল আহমদ চৌধুরীর ভাই। তার মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে তিনি গত ২০ মাস ধরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এসময়ে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। নানা সমস্যা সমাধানে নিজের ভূমিকা রেখেছেন। রাস্তা-ঘাট নির্মাণে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও সহযোগিতা করেছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দলের কর্মী-সমর্থক এবং নেতৃবৃন্দের সাথেও আছে তার সু-সম্পর্ক। এসব দিক বিবেচনায় অপর দুই প্রার্থীর চেয়ে তাকেই এগিয়ে রাখছে সচেতন মহল।
এদিকে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শাহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও দেশের সঙ্গে, বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সমাজকর্মীদের সাথে তার বরাবর নিবিড় যোগাযোগ। গোলাপগঞ্জ হ্যাল্পিং হ্যাণ্ডস ইউএসএ’র মাধ্যমে তিনি অসহায় দরিদ্র মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন অনেক বছর ধরে। আছেন আরও নানা সামাজিক সংগঠনের সাথে। বিশেষ করে তরুণদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে শুরুর দিকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে তার প্রতি জনসমর্থন বেড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচনী মাঠে থাকা একাধিক সূত্র।
অপর প্রার্থী আবু সুফিয়ান উজ্জ্বল একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। বর্তমানে ব্রাজিল যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শুরুর দিকে তিনি এলিম এবং জাবেদের তুলনায় অনেক পেছনে থাকলেও শেষের দিকে এসে তার প্রতিও জনসমর্থন কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে কুশিয়ারাপারের প্রার্থী হিসাবে ‘আঞ্চলিকতা’র একটা ঢেউ তুলে প্রচারণা চালিয়ে তিনি কিছুটা হলেও নির্বাচনী হাওয়া নিজের দিকে টানতে সক্ষম হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অপর দুই প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা অবশ্য আঞ্চলিকতার ঢেউয়ের পাশাপাশি দেদার টাকা ছড়ানোরও অভিযোগ তুলছেন।
অবশ্য এ অভিযোগ প্রায় সব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের।
সোমবার রাতে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় প্রায় সব প্রার্থীর একাধিক কর্মী-সমর্থকের। জাবেদের সমর্থকদের অভিযোগ, টাকা ছড়াচ্ছেন অপর দুই প্রার্থী। ঠিক তেমনি এলিম এবং উজ্জ্বলের সমর্থকদেরও অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা টাকার বস্তা নিয়ে ছুটছেন ভোটারের দ্বারে দ্বারে।
তবে যত যাইহোক, গোলাপগঞ্জের সচেতন মহলের ধারনা, শেষ পর্যন্ত ৮ মে’র নির্বাচনে ব্যক্তিগত ইমেজ আর অভিজ্ঞতার সুবাদে আবারও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জয় পেতে যাচ্ছেন মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম।