হারুন অর রশিদ স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে শেষ হয়ে গেলো বৈশাখী মেলা। প্রতি বছর বাংলা সনের বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বসে এই মেলা স্থানটি হিন্দু ও মুসলমানের তীর্থস্থান।
বৃহস্পতিবার (৮মে) এ মেলায় যেমন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগী ও জিকির আজগরে মেতে ওঠেন, অপর দিকে আধ্যাত্মিক সাধনা বিশ্বাসী সাধু সন্ন্যাসী ও বাউল-সাধকরা জিকির ও মারফতী গানে মুখরিত করে পুরো গড় এলাকা, তারা সারা রাত গান গেয়ে আসর জমায়।
ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, এককালে বাংলার রাজধানী হিসাবে খ্যাত এই পুন্ড্রনগরের হিন্দু রাজ্যের অত্যাচারী রাজা পরশুরামকে যুদ্ধে পরাজিত করে বিখ্যাত ওলীয়ে কামেল সুফী ও সাধক হযরত শাহ সুলতান মাহীসওয়ার বলখী (রঃ) তিনি এখানে ইসলামের পতাকা উত্তোলণ করেন। এবং নিজের সম্ভ্রম ও ধর্ম রক্ষার জন্য অত্যাচারী পরশুরামের একমাত্র বোন শীলা দেবীকে করতোয়া নদীতে আত্মবিসর্জনের দিন বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার। সেই থেকে হযরত শাহ সুলতানের স্মৃতি স্মরণে পরবর্তী বছরগুলোতে এই দিনে মহাস্থানে উভয় ধর্মের মানুষেরা সমবেত হয়ে পুণ্য সঞ্চয় করেন।
এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত বন্দেগীর জন্য শাহ সুলতান বলখী (রঃ) মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু-সন্ন্যাসী, মারফতি, বাউল গায়কেরা অবস্থান নেন পার্শ্ববর্তী অলীয়ে কামেল হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) মাজার এর পশ্চিম পাশের আমবাগান, মাজারের পাশে দুধ পাথর ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকায়। মেলা শুরুর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে মাজার ভক্তআসেকান জটাধারী, সাধু, সন্নাসী, ছিন্নমূল ভাসমান পাগল ও ধর্ম প্রাণ মাজার জিয়ারতকারী মুসাল্লিরা।
এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থানগড় এলাকা জুড়ে বসেছে এক একটি আস্তানা।
হযরত বোরহান উদ্দিন(রঃ) এর মাজার ও পশ্চিমে মহাস্থান বাগান নামক চত্বরে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে মারফতি গানের আসর বসিয়েছে বাউল সাধকরা।
হযরত বোরহান আলী মাজারের পাশে জটাধারী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আশা আবুল হোসেন ওরফে শিকল বাবা ও ঢাকা থেকে আসা লিটন পাগলাসহ বেশ কয়েকজন সাধু সন্যাসীদের সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপ করে জানান, আমরা বছরে একবার বাবার মাজারে এসে মনোবাসনা পূরণের জন্য গঞ্জিকা সেবক করে জিকির আসকারে মেতে থাকি সেখানে পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা ঠিক না।
মাজার এলাকায় দানের টাকা- পয়সা ও খাবার পাওয়ার আশায় অগণিত ফকির- মিসকিনও জড়ো হতে দেখা গেছে। মহাস্থানে এসে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ও আশাপূরণের জন্য অনেকেই মাজারের পশ্চিমপাশে দুধ পাথরে দুধ ঢেলে দেয়। অনেককেই সেখান থেকে দুধ সংগ্রহ করে পান করতেও দেখা গেছে।
শুধু সাধু-সন্ন্যাসী আর পূণ্যার্থীরাই নয়, বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষও মাজার জিয়ারত ও মেলা দর্শন করতে ছুটে আসছেন এমেলায়।
এদিকে মাজারের পশ্চিম পাশের মাঠে বসেছে হরেক রকম অস্থায়ী খাবারের হোটেল, পণ্যসামগ্রী ও বস্ত্র বিতান এর দোকানপাট। মেলায় আগতরা ফেরার পথে নানা সামগ্রী কেনাকাটা করেন। মেলাকে কেন্দ্র করে মাজারের চারপার্শ্বেই স্থাপন করা হয়েছে চোখ ঝাজালো আলোক সজ্জা টিপটপ ঝাড় বাতী। ধর্মপ্রান মানুষ যাতে নিবিঘ্নে তাদের ইবাদত বন্দেগী করতে পারে সে ক্ষেত্রে প্রশাসন থাকে তৎপর। ওই দিনে আইন শৃঙ্খলা বাহীনির অসংখ্য সিভিল ও পোশাকধারী কর্মকর্তা এবং ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট, সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে মাজারের বেশ কিছু এলাকায় বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। মহাস্থানগড় মাজার এলাকায় কেউ যেন কোন প্রকার মাদকদ্রব্য খাওয়া বিক্রি বা অসামাজিক কার্যকলাপ করতে না পারে সেজন্য বিশেষ সতর্কতায় থাকেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
মহাস্থানগড়ের এ মেলার প্রধান আকর্ষণীয় বিখ্যাত জিনিস হল ঐতিহ্যবাহী কটকটি। আদিকাল থেকেই এটি সুনামের সাথে বিক্রি হয়ে আসছে। দূর-দূরান্ত থেকে মাজারে আসা মানুষ ঐতিহ্যবাহী চাউলের ভাজা কটকটি কিনতে প্রতিটি দোকানে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে।
মহাসড়কে জানযট মুক্ত রাখতে বগুড়া জেলা ট্রাফিক পুলিশ সার্বক্ষণিক দ্বায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিনুজ্জামান এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় একটি পূর্ণভূমি এর পবিত্রতা রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দ্বায়িত্ব। এদিন কোন প্রকার গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, লটারী, জুয়াসহ কোন প্রকার মাদক সেবন ও বিক্রি করতে দেওয়া হবেনা।
তিনি আরো জানান, আইন শৃংঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ৫ শতাধিক পুলিশ স্বেচ্চাসেবী কাজ করবেন। সব মিলিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়ে গেলো বৈশাখীর শেষ বৃহস্পতিবার মহাস্থান গড়ের সাধু সন্যাসীদের মিলন মেলা।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ