মন্জুরুল আহসান
স্টাফ রিপোর্টারঃ ৫ই আগষ্ট পতিত আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার জোর করে ক্ষমতা আকরে ধরে রাখতে প্রতিবেশী দেশের সাথে যেসব চুক্তি সম্পাদন করেছে, সেগুলো পূণমূল্যায়ন করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের ২ দিন ব্যাপী লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি দ্বিতীয় দিন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ভার্চুয়াল বক্তব্যে যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্সা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে গণপদযাত্রা করেছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। দাবি আদায়ের এ পদযাত্রায় অংশ নেন লাখো মানুষ।
তিস্তা মহাপ্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে এবং ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে কাউনিয়া তিস্তা রেল পয়েন্ট সেতু এলাকা থেকে তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষকে নিয়ে পদযাত্রা ও তিস্তা চরে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্দোলন করছে কাউনিয়া উপজেলা তিস্তা রক্ষা আন্দোলন কমিটি। ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং পানির নায্য হিস্যা ও মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবিতে নদীর হাঁটু পানিতে নেমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিস্তা সেতুর কাউনিয়া পয়েন্ট থেকে কাউনিয়া বাস স্টান্ড অভিমুখে গণপদযাত্রা শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় ১১টি পয়েন্টে একইসঙ্গে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে।
সরেজমিনে দেখা যাচ্ছে, তিস্তা পাড়ের সব শ্রেণি-পেশার বাসিন্দারা তিস্তার পানিতে নেমে পড়েছেন। সেই সঙ্গে উচ্চ কণ্ঠে স্লোগান দিচ্ছেন, ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’।
পানিতে নেমে প্রতিবাদ জানানো কাউনিয়ার বাসিন্দা বৃদ্ধ মুসা পাটোয়ারি বলেন, পানিতে নেমেছি প্রতিবাদ করতে। কারণ আমার এই বয়সে আমার যে জমি, সেই জমিতে ফসল হচ্ছে না পানির অভাবে। আমরা আমাদের সেই পূর্বের তিস্তা দেখতে চাই, যেখানে অনবরত পানির স্রোত থাকবে। আমরা মাছ ধরব। যতদিন লাগে আমরা আমাদের এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এর আগে সকালে ১১টি পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে নদী পাড়েএসে শেষ হয়। পদযাত্রা শেষ হওয়ার পরে থেকেই পানিতে নেমে প্রতিবাদ জানানোর কর্মসূচি চলমান আছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু হয়। এদিন তিস্তা নদীবেষ্টিত পাঁচটি জেলার ১১টি স্থানে একসঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নদীপারের হাজারো বাসিন্দা কর্মসূচিতে অংশ নেন। কর্মসূচিতে যোগ দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। গত সোমবার তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তাবায়নের দাবিতে দুই দিনের ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির কাউনিয়া তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন পয়েন্টে উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক যোগে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীরে ৫টি জেলায় ১১টি পয়েন্টে দিনভর নানান আয়োজনে প্রথম দিন অতিবাহিত করে তিস্তাপাড়েই তাবুতে রাত যাপন করে লাখো মানুষ। রাতে রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি তুলে ধরে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তিস্তাপাড়ের মানুষের সুখ দুঃখের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। যার মাধ্যমে তিস্তার করুন চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতেও সকাল থেকেই কাউনিয়ায় তিস্তা নদীর তীরে জমে উঠেছে মানুষের ঢল। “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই এই স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা রেল সেতু এলাকা।
তিস্তা নদীর বুকে দুইদিনের কর্মসূচিতে শুধু ক্ষোভই নয়, জেগে উঠেছে আশার আলো। মানুষের চোখে-মুখে লড়াইয়ের দৃঢ়তা। তিস্তা নদী রক্ষার এই আন্দোলন শুধু একটি নদীর জন্য নয়, এটি বাংলাদেশের প্রকৃতি, কৃষি ও মানুষের জীবিকার লড়াই। “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই”—এই স্লোগান আজ হাজারো মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, যেন তিস্তা আবারও প্রাণ ফিরে পাবে এমন প্রত্যাশা তিস্তা পাড়ের মানুষের।
মঙ্গলবার বিকেলে ভার্চুয়াল বক্তব্যে তারেক রহমান আরো বলেন, তিস্তার পানি বন্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষের সাথে অপ্রতিবেশির মতো আচরণ করছে। ভারত পানি নিয়ে জাতিসংঘের সব আইন লঙ্ঘন করে উজানের গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে আমরা পানির অভাবে ঠিক মতো চাষাবাদ করতে পারিনা। আবার বর্ষা মৌসুমে হঠাৎ পানি ছেড়ে দিয়ে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী পতিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বলেছিলেন আমরা ভারতকে যা দিয়েছি ভারত কখনো ভুলবে না। আসলে তাই ৫ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানে সেই স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলে প্রতিবেশী দেশ তাকে মনে রেখে আশ্রয় দিয়েছে। আসলে আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসে না তারা ভালোবাসে পতিত সরকার প্রধানকে। তারেক রহমান বলেন, উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাচাতে লড়াইয়ের কোন বিকল্প নাই। আমাদেরকে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।