ধূমপান যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তা নতুন কোনো বিষয় নয়। এটি শুধুমাত্র ধূমপায়ীরই ক্ষতি করে না।বরং আশপাশের মানুষ ও পরিবেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, কেউ যখন সিগারেটের আগুনে দুর্ঘটনাবশত আহত হয় কিংবা ধোঁয়ার কারণে অসুস্থ বোধ করে, তখনও অনেক ধূমপায়ীর মধ্যে ন্যূনতম সামাজিক শিষ্টাচার প্রকাশের মানসিকতা দেখা যায় না। এটি কি কেবল অসচেতনতা!নাকি দায়িত্বহীনতার চরম প্রকাশ?
আমার বিশ্বাস, আমাদের সমাজে এই ধরনের আচরণগত শিক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া উচিত। এটি শুধু নৈতিকতার বিষয় নয়,বরং নাগরিক দায়িত্ববোধের অংশও। এ ধরনের শিষ্টাচার যদি শিক্ষার অংশ হিসেবে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আরও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে। পাশাপাশি, প্রতিটি পরিবারকেও সচেতন হতে হবে।যেন শিশুরা ছোটবেলা থেকেই সামাজিক শিষ্টাচার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পায়।
একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা
একবার ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফেরার পথে নৌকায় কয়েকজন তরুণ একসঙ্গে ধূমপান করছিলেন। বাতাসে সিগারেটের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের অনেকেই বিরক্ত হচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে কয়েকজন নারী যাত্রী তাদের ধূমপান বন্ধ করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা তখনও বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে অন্যের আড়ালে গিয়ে ধূমপান চালিয়ে যান। কিন্তু ধোঁয়া কি আড়াল মানে?
এ ধরনের ঘটনা আমাদের আশপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে। গণপরিবহনে, বিশেষ করে অটোরিকশা বা সিএনজিতে। অনেক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি নির্দ্বিধায় ধূমপান করেন, অন্য যাত্রীদের অসুবিধার বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে। অথচ সমাজে আমাদের মতো তরুণদেরই এসব শিষ্টাচার শেখানো উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেক সময় আমরা কিছু বলতে পারি না, আবার সহ্য করাও কষ্টকর হয়ে ওঠে।
কিভাবে পরিবর্তন সম্ভব?
সচেতনতা এবং শিষ্টাচারের অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে ব্যক্তি, পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। ধূমপানের ক্ষতিকর দিক এবং সামাজিক শিষ্টাচারের গুরুত্ব যদি শৈশব থেকেই শেখানো হয়, তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্বহীনতা কমবে। আইন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নৈতিক শিক্ষা ও সামাজিক চাপও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
অন্যের অসুবিধার কারণ না হওয়া এক ধরনের সৌজন্যবোধ, যা প্রতিটি নাগরিকের থাকা উচিত। আমাদের নিজেদেরই উদ্যোগী হয়ে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলে হয়তো একদিন আমরা এমন এক পরিবেশ পাব, যেখানে মানুষ শুধু নিজের নয়, অন্যের স্বাচ্ছন্দ্য ও সুস্থতার কথাও ভাববে।
কাজী মো. ইসমাঈল হোসেন
ব্যবস্থাপনা বিভাগ,
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়