জেলা প্রতিনিধি:
দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ভূমিদস্যু শফিক-রফিক হাওলাদারের জুলুমের রাজত্ব: কবিরাজকান্দির জনজীবনে আতঙ্ক
জেলা প্রতিনিধি:
আরশিনগর ইউনিয়নের কবিরাজকান্দি গ্রামের ওয়ার্ড নং ৯-এ দুই ভাই মোঃ শফিক আলী হাওলাদার ও রফিক হাওলাদারের নাম আজ ভূমিদস্যুতা, সন্ত্রাস ও সুবিধাবাদীতার প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। থানা সখিপুর, উপজেলা ভেদেরগঞ্জ ও জেলা শরীয়তপুর জুড়ে তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে, স্থানীয়রা এদের ডাকে "হাওলাদার বাহিনী"। দুর্ধর্ষ এই সন্ত্রাসী জোট নকল দলিল তৈরি, খাস জমি দখল, এমনকি নিজ বোনের সম্পত্তি আত্মসাৎ করতেও পিছপা হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তারা দশকের পর দশক ধরে গ্রামবাসীর জান-মালের নিরাপত্তাকে পদদলিত করছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় চলছে তাদের অন্যায়ের মহাযজ্ঞ।
ভূমিদস্যুতা থেকে সন্ত্রাস: রফিক শফিকের অপরাধের ধারাবিবরণী
শফিক ও রফিক হাওলাদার প্রধান হাতিয়ার হলো জাল দলিল ও ভূমি দখল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই দশকে তারা কবিরাজকান্দি ও আশেপাশের গ্রামের ৫০ একরেরও বেশি খাস জমি এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি জবরদখল করেছে। তাদের একটি কুখ্যাত কৌশল হলো— নিজেদের রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে জমির মালিকানা রেকর্ডে পরিবর্তন এনে সম্পত্তি দখল করা। এক্ষেত্রে স্থানীয় ভূমি অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তা তারা নিয়মিত পেয়ে আসছে বলে অভিযোগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ কৃষক বলেন, "২০১৮ সালে আমার ৩ বিঘা জমির দলিল জাল করে শফিকের লোকজন দখল নেয়। থানায় অভিযোগ করলে উল্টো আমাকেই হুমকি দেওয়া হয়। এখন রাজনৈতিক দল যেই ক্ষমতায় থাকুক, ওদের সাপোর্ট থাকে।"
একই গ্রামের এক মহিলা, যিনি তার স্বামীর মৃত্যুর পর জমি হারিয়েছেন, তিনি বলেন, "ওরা আমার শ্বশুরবাড়ির জমি দখল করতে আমার ছেলেকে পিটিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। এখন আমরা মুখ লুকিয়ে থাকি।"
রাজনৈতিক সুবিধাবাদ: ক্ষমতার রথের চাকায় গা ভাসানো
হাওলাদার ভাইদের অন্যতম শক্তি হলো তাদের রাজনৈতিক নমনীয়তা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তারা দলীয় কর্মী হিসেবে সক্রিয় হয়, অন্যদিকে বিএনপি বা অন্যান্য দলের প্রভাব বাড়লে তাদের পতাকাতলে আশ্রয় নেয়। স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নেতা (নাম গোপন রেখে) বলেন, "এরা কখনোই আদর্শের লোক নয়। টাকার বিনিময়ে ওরা যেকোনো দলের সভা-মিছিলে যোগ দেয়। এই সুবিধাবাদীতাই ওদের টিকিয়ে রেখেছে।"
তাদের সাথে যোগসাজশ রয়েছে স্থানীয় দু’দলেরই সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনীর। ফলে কোনো সরকারই এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেন, শফিক-রফিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেই তা অগ্রাহ্য হয়, কিংবা মামলা হয় "মামলা"ই থেকে যায়।
নারী ও পরিবারের ওপর অত্যাচার: নিষ্ঠুরতার চূড়ান্ত
অপরাধের তালিকায় সবচেয়ে বর্বরোচিত অধ্যায় হলো নিজ বোনের সম্পত্তি দখল। শফিক-রফিকের বোনের স্বামী মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত জমি ভাইদের দখলে চলে যায়। প্রতিবেশী এক নারী (নাম গোপন) বলেন, " আপুকে ওরা প্রকাশ্যে গালাগালি দিত, ফসল কেটে নিত। শেষে ভিটেমাটি ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে।"
গ্রামবাসীর আর্তনাদ: "আমরা মুক্তি চাই"
কবিরাজকান্দির মানুষ এখন নিঃশ্বাস নিতেও ভয় পায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, "রাত হলে বাড়িতে তালা দিয়ে রাখি। কে জানে কখন ওদের গুন্ডারা এসে জ্বালাও-পোড়াও করবে!" আরেক কৃষক ক্ষোভ উগড়ে দেন, "হাওলাদাররা যদি আইনের ঊর্ধ্বে হয়, তাহলে এই দেশে আইন কীসের জন্য?"
ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতনের পরেও কবিরাজকান্দিতে আইনের শাসন পুনরুদ্ধার হয়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এলাকার সচেতন মহল বলেন, "নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে বলেছিল, সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করবে। কিন্তু শরীয়তপুরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় আজও শফিক-রফিকের মতো সন্ত্রাসীরা কেন রাজত্ব করছে?"
গ্রামবাসীর একটাই দাবি—হাওলাদার ভাইদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। এজন্য তারা চাইছে:
১. ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে জাল দলিল ও দখলকৃত জমির তদন্ত।
২. শফিক-রফিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের।
৩. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ