দ্বীপক চন্দ্র সরকার: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার বাকোলজোড়া ইউনিয়নের নগর সিংহা জামে মসজিদ গোরস্থানে শহীদ ওমর ফারুক এর কবর জিয়ারত করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম মনিরুজ্জামান দুদু ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কবর জিয়ারত করার আগে মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের সার্বিক খোঁজ নেন এবং সমবেদনা প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দুপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে রাজধানীর লক্ষ্মীবাজার এলাকায় গুলিতে নিহত হন উমর ফারুক। নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌর শহরের দক্ষিণ পাড়া এলাকায় বসবাস ছিল নিহত ওমর ফারুকের। গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের সিংহা গ্রামে। তিনি রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজের (ইসলাম শিক্ষা) অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে ওমর ফারুক বড়। বাবা আব্দুল খালেক সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী। জানা গেছে, পরোপকারী মানুষ ছিলেন উমর ফারুক। মুমূর্ষু রোগীদের রক্ত দিয়ে জীবন বাঁচাতে বন্ধুদের সাথে নিয়ে খুলেছিলেন দুর্গাপুর “ব্লাড ডোনার সোসাইটি” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই সংগঠনের প্রধান ছিলেন ওমর ফারুক। হাজারো সংকটাপন্ন মানুষকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। পড়াশোনা চালাতে তিনি ঢাকায় চলে গেলেও সংগঠনের কাজ চলমান রেখেছেন নিয়মিত। এক কথাই মানুষ মানুষের জন্য তারই উদাহরণ ছিলেন উমর ফারুক। তবে বেশিদিন আর মানুষের জন্য বেঁচে থাকা হলো না। গত ১৯ জুলাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে সহপাঠীদের সঙ্গে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বের হন উমর ফারুক। কিন্তু লক্ষ্মীবাজার এলাকায় তার বুকে দুইটি ও নাভিতে একটি মোট তিনটি গুলি লাগে। এরপর তাকে উদ্ধার করে সহপাঠীরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ততক্ষণে তার মৃত্যু হয়। ওমর ফারুকের ছোট ভাই আবদুল্লাহ অনিক জানান, তাদের বাবা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে গত ২৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা ছিল আর বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ভাইয়ের কিন্তু এরই মধ্যে ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়। ভাইয়ের বন্ধুদের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর আসে বাড়িতে। ভাইয়ের লাশ আনতে স্বজনদের সাথে নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যায়। তবে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়ে লাশ খুঁজতে চাইলে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। হাসপাতালের লোকজন জানায় থানা পুলিশের অনুমতি লাগবে। পরে শাহবাগ থানায় গেলে পুলিশ জানায়, ওমর ফারুক নামে কেউ ওখানে নেই। অন্য কোথাও খুঁজতে বলে পরে সূত্রাপুর থানায় গেলে সেখানেও এ নামে কারো লাশ নেই বলে হাসপাতালে খোঁজার অনুমতি দেয়নি। রাত—দিন দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো কূল—কিনারা হয়নি। এরপর দুর্গাপুরের স্থানীয় এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী সাহেবকে বিষয়টি জানালে তিনি সেখানকার থানায় কথা বলে দেন। পরে পুলিশ অনুমতি দেয় হাসপাতালে গিয়ে লাশ খোঁজ করার। হাসপাতালে গিয়ে দেখি একটা সাধারণ ঘরে অর্ধশতের বেশি লাশ পড়ে আছে। সেখানে খোঁজাখুঁজি করলে শুরুতেই ভাইয়ের মুখটা ভেসে ওঠে। পরে পোস্টমর্টেমসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুর দুইদিন পর লাশ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়। গ্রামে বাড়িতে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তিনি আরো বলেন, মারা যাওয়ার আগেরদিনও আমি ভাইয়ারে বলছি বাড়িতে চলে আসতে, আম্মা কান্নাকাটি করে। ভাইয়া আমাকে বলছিল, চিন্তা না করার জন্য আর আম্মার খেয়াল রাখতে। আব্বাকে নিয়ে একসাথেই বাড়িত ফিরব বলে জানিয়েছিল। কিন্তু আমার ভাই লাশ হয়ে ফিরল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওমর ফারুকের বাবা আব্দুল খালেক বলেন, আমার ছেলে রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাত। এখন সে দুনিয়াতে নাই। পরোপকারী ছেলেটার জীবনপ্রদীপ নিভে গেল। আমি সবার কাছে দোয়া চাই আমার ছেলের জন্য। উমর ফারুকের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়া মানুষের জীবন বাঁচানোর সংগঠনটি তার স্মরণে কাজ চলমান রাখবেন সহপাঠী ও সংগঠনের সদস্যরা। দুর্গাপুর ব্লাড ডোনার সোসাইটি নাম পরিবর্তন করে নাম করণ করা হয়েছে শহীদ উমর ফারুক ব্লাড ডোনার সোসাইটি। এখানেই বেঁচে থাকবে সবার উমর ফারুক।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ