সৈয়দ মোফাজ্জল আলী
ওসমানীনগর প্রতিনিধি >
সাড়ে ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে অপরিকল্পিতভাবে নিচু সেতু নির্মাণ করার ফলে বন্ধ হয়ে যাবে নৌপথ। সিলেট-সুলতানপুর-বালাগঞ্জ সড়কের ফতুরখাড়া নামক স্থানে হাওড় এলাকায় পরিকল্পনাহীন নিচু সেতু নির্মাণের অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া নির্মাণ কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের শেষ নেই।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বালাগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর-গহরমলি এলাকায় নির্মাণাধীন
সেতুর উপর অংশের প্রায় ৩০ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পাশেই পুরোনো স্টিলের সেতুর চেয়ে প্রায় ৪ফুট নিচু করে সেতু নির্মাণ করায় নৌপথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।স্তানটি হাওরাঞ্চল হওয়ায় স্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতেই সেতুর উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ,
পাইলিংয়ের কাজ শেষ করে সেতু নির্মাণের কাজ যখন শুরু হয় তখন স্থানীয়রা সেতুর উচ্চতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। উঁচু কম হওয়ায় মানুষজন দুর্ভোগের কথা জানিয়ে নানাভাবে প্রতিবাদ করলেও কেউ তা আমলে নেয়নি। বরং স্থায়ীয়দের দুর্ভোগের কথা চিন্তা না করে সওজ’র কথিপয় কর্মকর্তা টাকা হরিলুট করতে নকশার দোহাই দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাড়ে ১৬কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে সেতু নির্মাণের কাজ পায় ‘জন জেবি’ নামের তিনজনের অংশীদারিত্বের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের শুরুর দিকে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও বৃষ্টিপাতের মৌসুম শুরু হওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
স্থানীয় উপকারভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুটি আরো ৪-৫ফুট উঁচু করার প্রয়োজন ছিলো। নিচু সেতু নির্মাণে কৃষিপণ্যবাহী নৌকা, ট্রলার, বালুবাহী নৌকা, কৃষকদের বোরো ধান বোঝাই নৌকা ও মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার নৌকা এপথে চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সেতুটি এলাকাবাসীর জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া, বর্ষায় সেতুর নিচ দিয়ে কচুরিপানা সেতুর পাশেই স্তূপ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। বুরো মৌসুমে এসব কচুরিপানা কৃষকদের গলার কাঁটায় পরিণত হবে।
এবিষয়ে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা আব্দুল মুনিম বলেন, নিচু সেতু নির্মাণে নৌপথ বন্ধ হবে এটা তো মেনে নেয়া যায় না। লুটপাটের হীন উদ্দেশ্যে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কতিপয় জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনের যোগসাজেসে এমনটি করা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, নৌপথ বন্ধ করে বড় বাজেটে এতো নিচু সেতু কেনো নির্মাণ হবে তা আমি বুঝতে পারছিনা?এবিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় ডিসি স্যারের সাথে কথা বলবেন বলে তিনি জানান । ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট ম্যানেজার নজরুল ইসলাম বলেন, সড়কের উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নজরুল ইসলাম কে প্রশ্ন করা হয়েছিল স্থানীয়দের আপত্তি উপেক্ষা করে কেনো নিচু করে সেতুটির নকশা করে নির্মাণ করা হলো? উপকারভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ?এসব প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সওজ সিলেট অফিসে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। হাওরাঞ্চল বিবেচনায় সেতুটি আরো উঁচু করলে নৌপথ বন্ধ হতো না।