স্টাফ রিপোর্টার, এরশাদ হোসেন পাপ্পু:এনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক না কেন, জনগনের দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোন সুফল বয়ে আনবে না। তাই সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় কোন নির্বাচন দেওয়ায় চেষ্টা করা হলে দেশের জনগন তা মেনে নিবে না। তিনি বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপি ছয় মাসেও কোন কথা বলেনি। আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি তাদের সকল কর্মকান্ড। এখন দেখছি তারা জনগনকে পাশ কাটিয়ে চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হলেও তারা ব্যর্থ, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও তারা কিছুই করতে পারছেনা। এনিয়ে জনগন ক্ষুব্ধ হলেও সরকার জনগনের ভাষা বুঝছে না। এজন্য আমরা জনগনকে সাথে নিয়ে আমরা জনসমাবেশের মাধ্যমে সরকারকে বার্তা দিচ্ছি।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি ওইসব কথা বলেন।
নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা,অবনতশীল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি,
দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শহরের শেরে বাংলা সড়কের এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার।
জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক শাহীন আকতার শাহীনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপস্থাপিত ৩১ দফা হচ্ছে জনগনের মুক্তির সনদ। সেখানে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা স্পষ্ট আকারে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশ ও জনগনের স্বার্থে কথা বলছেন বলেই বিএনপি জনগনের হৃদয়ে গভীরভাবে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু একটি মহল বিএনপিসহ দেশের জনগনকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে গভীর যড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সে সব ষড়যন্ত্র জনগনকে সাথে নিয়ে মোকাবেলা করতে শহীদ জিয়ার সৈনিকরা প্রস্তুত রয়েছে বলে সমাবেশে জানান তিনি। তিনি বলেন বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আগামিতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে আন্দোলন করা সকল দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে, বলেন তিনি’,।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী বেবী নাজনীন, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি এ্যাড. ওবায়দুর রহমান, শফিকুল ইসলাম জনি, জিয়াউল হক জিয়া, কাজী একরামুল হক, বজলার রহমান, সুমিত কুমার আগরওয়ালা নিক্কি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন পাপ্পু, সহ সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম, ও হাফিজ খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, এম এ পারভেজ লিটন ও মনোয়ার হোসেন, দপ্তর সম্পাদক নজরুল ইসলাম লালবাবু, প্রচার সম্পাদক আবু সরকার, উপজেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম লোকমান, সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান কার্জন, পৌর বিএনপির সভাপতি হাজী রশিদুল হক সরকার,সাধারণ সম্পাদক শেখ বাবলু, কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ডালিম প্রমুখ। প্রধান অতিথি এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হলেও তার দোসররা বাইরে ও প্রশাসনের ভিতরে থেকে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরকে চিহৃিত করে বিচারের আওতায় আনা দাবি জানিয়ে ছাত্রদলের সাবেক এই নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত ছাত্র জনতাকে হত্যাকারী খুনি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে হবে।
যুগ্ম মহাসচিব বলেন ২/১টি রাজনৈতিক দল এখন খুবই উৎফুল্ল। তারা জনগনের আশা আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে অন্য উদ্দেশ্যে কথা বলছে। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অতীতে যে ভুল করেছেন, এবারও ভুল করলে জনগন ক্ষমা করবে না। প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কারও কথায় কান না দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন। চাঁদাবাজ,সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক, আপনারা তাদেরকে আইনের আওতায় আনুন।
যুগ্ম মহাসচিব প্রিন্স দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন বিএনপি হচ্ছে জনগনের দল। আপনারা জনগনের ভাষা বুঝুন, এমন কিছু করবেন না, যাতে জনগন ক্ষুব্ধ হয়। জনগনের পাশে দাড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামি সংসদ নির্বাচন হবে কঠিন। এ নির্বাচনে জয়ী হতে এখন থেকে কাজ করে যেতে হবে। ভুলে যেতে হবে সকল বিভেদ। সৈয়দপুর যে বিএনপির ঘাটি, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে তিনি দলের সকল নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন এখন থেকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার আহবান নেতাকর্মীদের প্রতি।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য বলেন জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক শওকত হায়াত শাহ, শাহীন হোসেন, যুবদলের আহবায়ক তারিক আজিজ, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রেজওয়ান আকতার পাপ্পু ও সদস্য সচিব পারভেজ আলম গুড্ডু,জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক ফরহাদ হোসেন ও সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম বাবু, জেলা কৃষক দলের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মিজু বসুনিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সাদেদুজ্জামান দিনার, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হোসাইন মোহাম্মদ আরমান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম রাব্বি,জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওনক জাহান রেনু ও সাধারণ সম্পাদক রুপা হোসেন জেলা তাঁতী দলের সদস্য সচিব জুয়েল বাবু প্রমুখ।
এদিকে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের পতন পর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির মঙ্গলবারের সমাবেশটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দুপুরের পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন।
শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয় সমাবেশস্থল। বিকেলের পর দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও জনতার উপচেপড়া ভীড় ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের এলাকায়। ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে যায় গোটা এলাকা। এসময় সমাবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দলের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ছাড়াও বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। সমাবেশে বিএনপি,যুবদল,ছাত্রদল মহিলা দল,শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, তাঁতী দল,মৎস্যজীবী দল, জাসাস,জিয়া মঞ্চ, জিয়া পরিষদের সকল নেতাকর্মী ছাড়াও সমর্থকরা অংশ নেন।